ঢাকা | বঙ্গাব্দ

প্রতারক ফরিদুল আলম জালিয়াতি করে ৮৭ কোটি টাকা আয়, সব সম্পদ গড়েছেন স্ত্রীর নামে

  • আপলোড তারিখঃ 14-06-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1928 জন
প্রতারক ফরিদুল আলম  জালিয়াতি করে ৮৭ কোটি টাকা আয়, সব সম্পদ গড়েছেন স্ত্রীর নামে ছবির ক্যাপশন: প্রতারক ফরিদুল আলম জালিয়াতি করে ৮৭ কোটি টাকা আয়, সব সম্পদ গড়েছেন স্ত্রীর নামে

চট্টগ্রাম লোহাগাড়া থানার প্রতারক ফরিদুল  আলম   একটি দুটি নয়, রাজধানীর পূর্বাচল এলাকায় অন্তত দশটি প্লট অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় এক শ’ কোটি টাকা। আর এই টাকায় বিপুল সম্পদ গড়েছেন তার গৃহিণী স্ত্রী মুক্তা আক্তারের নামে। দুবাইয়ে কিনেছেন ফ্ল্যাট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও খুলেছেন ব্যবসা।

ফরিদুল  আলম এই জালিয়াতি চক্রে জড়িত আছেন রাজউকের অসাধু কয়েকজন কর্মকর্তা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের ভূমি অফিসের এক কর্মচারীও এই চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পুরো চক্রটিকে গ্রেপ্তারের জন্য অনুসন্ধান শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) একটি দল।

সিটিটিসির ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের ইকোনমিক ক্রাইম সূত্র জানায়, গত ২৭ জুলাই রাজধানীর একটি থানায় আকবর হায়দার নামে এক ব্যক্তি জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, আগে থেকে পরিচিত ফরিদুল  আলমের মাধ্যমে তারা পূর্বাচল এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন চারটি প্লট কিনেন। পরে  ফরিদুল  আলম আরও কয়েকটি প্লট বিক্রি হবে জানালে তিনি কিনতে সম্মত হন। এই সুযোগে ফরিদুল  আলম ভুয়া দলিলপত্রসহ রাজউক থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বানিয়ে আলাদা আলাদা ব্যক্তিকে বিক্রেতা সাজিয়ে বিক্রি করে।

২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে জালিয়াতি করে এভাবে ১০টি প্লট বিক্রির মাধ্যমে  ফরিদুল  আলম মোট ৮৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

জালিয়াতির এই মামলাটি তদন্তের জন্য  থানা থেকে ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের কাছে পাঠানো হলে সম্প্রতি মোবারকের স্ত্রী মুক্তা আক্তার ও তুষার নামে এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রথম দফায় তিন দিনের রিমান্ড ও দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুরো জালিয়াত চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়। ফরিদুল  আলমসহ এই চক্রের সব সদস্যকে গ্রেপ্তারের জন্য ইতোমধ্যে একাধিক অভিযানও চালানো হচ্ছে।

 অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম  বলেন, ‘ ফরিদুল  আলমের নেতৃত্বে এই চক্রটি একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতি করেছে। এই চক্রের সঙ্গে রাজউক ও ভূমি অফিসের যারা জড়িত, তাদের বিষয়েও খোঁজ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে  ফরিদুল  আলমকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

ফরিদুল  আলমের জালিয়াতির ধরন

তদন্তসংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, মামলার বাদীর বিশ্বাস অর্জনের পর  ফরিদুল  আলম তার সঙ্গে যুক্ত রাজউকে কর্মরত সহযোগীদের মাধ্যমে পূর্বাচলের বিভিন্ন প্লট মালিকের জমির কাগজপত্র সংগ্রহ করত। এরপর জালিয়াতি করে প্লট বিক্রির জন্য রাজউকের বিক্রয় অনুমতিপত্র, মালিকানা ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে। পরে জমির আসল মালিকের নামেই শুধু ছবি পরিবর্তন করে একটি নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ফরিদুল  আলম জালিয়াতচক্রটি সব কাগজপত্র তৈরি করে নিজেদের এক সদস্যকে প্লটের মালিক সাজিয়ে ক্রেতার সামনে হাজির করে। ক্রেতা কাগজপত্রের কপি নিজের কাছে রেখে রাজউকে খোঁজ নিলে সেখান থেকেও ইতিবাচক তথ্য পান। শেষ পর্যন্ত জমি কেনার জন্য রাজি হলে চক্রের সদস্যরা নিজেদের লোকজনকে ভূমি রেজিস্ট্রার সাজিয়ে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করায়। জমির প্রকৃত দলিলের মতো দলিলের একটি অনুলিপিও দেয়া হয় ক্রেতাকে। অথচ ওই দলিলের কোনো কিছুই ভূমি অফিসের বালাম বইয়ে থাকে না।

জালিয়াতি ও প্রতারণার শিকার আকবর হায়দার  বলেন,ফরিদুল  আলম  আগে থেকে পরিচিত হওয়ার কারণে তার মাধ্যমে কেনা প্লটগুলোতে আগে কখনো যাননি। চলতি বছরের শুরুর দিকে তার অফিসের একজন কর্মকর্তা পূর্বাচল এলাকায় গিয়ে দেখতে পান তার কেনা প্লটে বাউন্ডারি অন্য একজন দেয়াল তৈরি করছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজে যোগাযোগ করলে বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তা নিজেকে ওই জমির মালিক দাবি করেন। ওই ঘটনার পরপরই তিনি তার কেনা অন্য প্লটগুলোতে গিয়ে দেখতে পান সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির নামে সাইনবোর্ড টাঙানো। দ্রুত দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে তিনি রাজউক ও রূপগঞ্জ ভূমি অফিসে খোঁজ নিলে জানতে পারেন সেগুলো ভুয়া দলিল।

ফরিদুল  আলম  জালিয়াতির টাকায় স্ত্রীর নামে বিপুল সম্পদ

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, জালিয়াতচক্রের মূল হোতা ফরিদুল  আলমের বাড়ি  চট্টগ্রাম লোহাগাড়া থানার পদুয়া ইউনিয়নে। তার বাবার নাম সরোয়ার কামাল। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া ফরিদুল  আলম দীর্ঘদিন রূপগঞ্জ এলাকায় বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পরে বালু সরবরাহের পাশাপাশি জমি বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত হন ফরিদুল  আলম। এ সময় রাজউক ও ভূমি অফিসের কিছু অসাধু লোকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জালিয়াতির একটি চক্র গড়ে তোলেন।


স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সাত বছরে হঠাৎ করেই বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান। তবে কৌশলী ফরিদুল  আলম জালিয়াতির মাধ্যমে উপার্জিত টাকায় নিজের পরিবর্তে স্ত্রী মুক্তার নামে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন। ভুক্তভোগীরা মামলা করলেও কোনো সম্পদ যাতে বেহাত না হয় সে জন্য নিজের নামে সম্পদ রাখেননি  ফরিদুল  আলম

সিটিটিসির কাছে রিমান্ডে থাকা মুক্তা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, কোনো পেশায় যুক্ত না থাকায় তার নিজের কোনো আয় নেই। মুক্তা জানান, গত বছরের নভেম্বরে প্রায় ৮০ লাখ টাকায় গ্লোরি ও হ্যাভলস ব্র্যান্ডের দুটি জিপ গাড়ি কিনে স্বামী  ফরিদুল  আলম তার নামে রেজিস্ট্রেশন করে দেন।

এ ছাড়া বছর তিনেক আগে ফরিদুল  আলম এমভি মাইশা নামে দুটি বাল্কহেড কিনেছেন মুক্তার নামে। মাইশা পরিবহন নামে একটি বালুবাহী ট্রাকও আছে। পূর্বাচলের পাশে দাউদপুর ইউনিয়নে ১২ শতাংশ জমি, ইছাপুরা বাজার মসজিদের পাশে দশ কাঠার একটি জমিও আছে। ইছাপুরা বাজারের ওই জমিতে একটি দশ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। বর্তমানে ছয় তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সব সম্পদই স্বামী তাকে দিয়েছে বলে জানান মুক্তা।

জিজ্ঞাসাবাদে মুক্তা আক্তার আরও জানান, ইছাপুরা এলাকায় একটি গরুর খামারে তাদের অর্ধশতাধিক গরু, দুবাইয়ের দেরাই এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ও যুক্তরাষ্ট্রে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে একটি পেট্রোল পাম্প ও দোকান কিনেছেন। মুক্তা জানান, তার স্বামী দুবাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করার পরিকল্পনা করছিলেন। ছয় মাস আগে পরিবারের সবাই মিলে দুবাই ঘুরেও আসেন।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা  বলেন, তারা তদন্ত করছেন প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি মানিলন্ডারিং আইনে অনুসন্ধানের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে বলা হয়। সিআইডির ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াড জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি বিস্তারিত খোঁজ-খবর করবে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ সেরা খবর

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

ইসরায়েল এখন গাজার প্রতিচ্ছবি! অবশেষে নেতানিয়াহুর শিক্ষা হলো